বাংলাদেশের সংস্কার ও বন্যা পুনর্বাসনে ‘সহায়তার প্রতিশ্রুতি’ জাতিসংঘের

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সমগ্র জাতি এখন ‘সবচেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ’ এবং সবার জন্য ‘একটি উদাহরণ স্থাপন করা’ তার সরকারের মূল লক্ষ্য।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের যে উদ্যেগ নিয়েছে, তাতে জাতিসংঘের সমর্থন থাকার কথা বলেছেন এ বিশ্ব সংস্থার আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস।

বাংলাদেশের পুলিশ এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কার কার্যক্রমে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সহায়তার প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছেন।

রোববার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন গোয়েন লুইস। সেখানে সংস্কার, দুর্নীতি দমন, বন্যা পুনর্বাসন, রোহিঙ্গা সংকট এবং জুলাই-অগাস্টের ‘গণহত্যার’ ঘটনায় জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন তদন্ত নিয়ে আলোচনা হয় বলে সরকারপ্রধানের দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করেন লুইস। বিপ্লব-পরবর্তী প্রশাসনের প্রধান হিসাবে ‘অসাধারণ ভূমিকা গ্রহণের জন্য’ ইউনূসকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সমগ্র জাতি এখন ‘সবচেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ’ এবং সবার জন্য ‘একটি উদাহরণ স্থাপন করা’ তার সরকারের মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, “দেশের অর্থনীতির সংস্কার এবং প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ “

গোয়েন লুইস নিরাপত্তা বাহিনীসহ পুলিশ প্রশাসনে সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে জানতে চান। প্রধান উপদেষ্টা তাকে বলেন, সরকার পুলিশ সংস্কারকে অগ্রাধিকারে রেখেছে। সরকার একটি সমন্বিত জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা স্থাপনের জন্যও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা দেশের দুর্নীতি কমাতে এবং প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাসে সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে, যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হতে পারে।

লুইস বলেন, জুলাই ও অগাস্ট মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্ত দল ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) আহত এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করার উপায় খুঁজছে।

বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘ যে ৪০ লাখ ডলার দিয়েছে, সে কথাও তিনি বলেন।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক বলেন, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বন্যা কবলিতদের সহায়তার জন্য জাতিসংঘ বিভিন্ন সংস্থা ও দাতব্য সংস্থার সহায়তার সমন্বয় করেছে।

ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের সহায়তা চান।

পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। লুইস তিন পার্বত্য জেলায় জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সহায়তা কার্যক্রমের রূপরেখা তুলে ধরেন।

ইউনূস রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে শিশুদের ‘উন্নত ভবিষ্যৎ’ গড়ার জন্য জাতিসংঘের সহায়তা চান।

ম্যানগ্রোভ গবেষণা, শ্রম সংস্কারে ডেনমার্কের সহায়তার প্রত্যাশা

বাংলাদেশের শ্রম ব্যবস্থার সংস্কার এবং ম্যানগ্রোভ গবেষণায় ডেনমার্কের সমর্থন চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, এ দুটি খাত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সরকারপ্রধানের দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে শ্রম সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘অপরিহার্য’ বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ইউনূস বলেন, আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়নের মত শ্রম সংস্কার তার সরকারের সংস্কারের একটি মূল ক্ষেত্র। এটি শ্রমিক ও উৎপাদনকারী উভয়ের জন্যই অপরিহার্য।

প্রধান উপদেষ্টা ম্যানগ্রোভ বন নিয়ে ডেনমার্ক-বাংলাদেশ যৌথ গবেষণার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “ম্যানগ্রোভে বিনিয়োগ করা উচিত। এটি ঝড় থেকে দেশকে রক্ষা করে।”

জুলাই-অগাস্টের ছাত্র বিপ্লবের সময় গুলিতে গুরুতর আহতদের চিকিৎসার জন্যও তিনি ডেনমার্ক সরকারের সহায়তা চান।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানান ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত। তিনি ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের অভিনন্দন বার্তা প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ডেনমার্কের সহায়তার প্রস্তাব বৈঠকে তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, উঁচু মানের প্রকল্পগুলোতে ডেনমার্কের আগ্রহ রয়েছে। ড্যানিশ শিপিং এবং বন্দর জায়ান্ট মার্সক/এপিএম টার্মিনালে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, অফশোর উইন্ড এনার্জি প্রকল্পে ১.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং ঢাকায় সায়দাবাদে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন রয়েছে এসব প্রকল্পের মধ্যে।

শ্রম সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন জানান ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার। তিনি এ বিষয়ে ডেনমার্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আলোচনার সম্ভাবনার কথা বলেন।

সরকারের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক কাজী রাসেল পারভেজ এবং ডেনমার্কের উপ-রাষ্ট্রদূত অ্যান্ডার্স কার্লসন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আশাবাদ

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইরানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশার কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরেকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার তেজগাঁওয়ে কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ইরান সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন ইরানের দূত।

বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্র, যেমন বাণিজ্য ও ব্যবসা, সংস্কৃতি, জ্বালানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা ইরানের পদক্ষেপকে স্বাগত জানান এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটে বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ইরানকে ধন্যবাদ জানান। সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *