কখনও ভাবিনি ফুটপাতের একটা ছেলে এত বড় সম্মান পাবে।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কার ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পাচ্ছেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী।
ভারতের ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অভিনেতার হাতে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে।
হিন্দুস্থান টাইমস লিখেছে, সোমবার ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এক্স হ্যান্ডেলে পুরস্কারের খবরটি দিয়ে লিখেছেন, “দাদাসাহেব ফালকে বাছাই জুরি বোর্ড কিংবদন্তি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৮ অক্টোবর ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।”
অশ্বিনী বৈষ্ণব আরও লিখেছেন, “মিঠুন দার অসাধারণ সিনেমাটিক সফর সব প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা।”
এর আগে বাঙালি হিসেবে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এবার পুরস্কারটি উঠবে মিঠুন চক্রবর্তীর হাতে।
পুরস্কার পাওয়ার এই খবরে আবেগাপ্লুত এই অভিনেতা।

আনন্দের এই মুহূর্তে চলচ্চিত্রে যাত্রার শুরুর দিকের কষ্টের কথা স্মরণ করে তিনি বলেছেন, “কখনও ভাবিনি ফুটপাতের একটা ছেলে এত বড় সম্মান পাবে। আমি কলকাতার অন্ধ গলি, সেখান থেকে উঠে এসেছি। মুম্বইয়ের রাস্তার ফুটপাতে থেকেছি।
“কখনও কল্পনা করতে পারিনি, এতবড় একটা সম্মান পাব। বিশ্বাস করুন, আমি আক্ষরিক অর্থেই হতবাক। আমি হাসতেও পাচ্ছি না, কাঁদতেও পাচ্ছি না। এমন একটা সম্মান দিলে কে কী বলবে, কেউই কিছু বলতে পারে না। আমি এই পুরস্কার আমার পরিবার ও বিশ্বজুড়ে থাকা আমার অগণিত ভক্তকে উৎসর্গ করছি।”
অনুরাগীদের শক্তিশালী হওয়ার বার্তা দিয়ে এই অভিনেতা বলেন, “আমি শুধু আমার সেই অনুরাগীদের বলতে চাই, যারা এক্কেবারেই আর্থিকভাবে শক্তিশালী নয়, যে আমি যদি এখানে পৌঁছতে পারি, তাহলে আপনারাও পারবেন।”
মিঠুনের দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্তির এই খবরে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে।
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, “ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। এই সম্মান, এই পুরস্কার মিঠুন দার প্রাপ্য। আমাদের কাছে দাদা অনুপ্রেরণা। সম্প্রতি আমি মিঠুন দার ‘কাবুলিওয়ালা’ সিনেমাটি দেখে খুব কেঁদেছি। উনি আমাদের দেশের গর্ব।”
‘মহাগুরুর’ এই খবরে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও ভীষণ খুশি।
তিনি বলেন, “এই মুহূর্তটাকে আমাদের উচিত সবার উদযাপন করা। আমি ব্যক্তিগত ভাবে উনার ভীষণ বড় ভক্ত। উনি আমার কাছে অনুপ্রেরণা। এত বছর ধরে নিজের অভিনয়ের গুণে তিনি তার এই জায়গা তৈরি করেছেন। দেশের অন্যতম সেরা অভিনেতা তিনি। দাদাকে আমার প্রণাম।”
এই খবরে মিঠুনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেক অভিনয়শিল্পী।
১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’ দিয়ে সিনেমার দুনিয়া প্রথম পা রাখেন মিঠুন চক্রবর্তী। প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের পরই অসামান্য অভিনয় নৈপুণ্যের জন্য তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি বলিউডে পা রাখেন। ১৯৮২ সালের ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ সিনেমায় ‘জিমি’র ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, যা ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বক্স অফিসে একটি বড় সাফল্য পেয়েছিল।
১৯৯১ সালে, তিনি ‘অগ্নিপথ’ সিনেমায় কৃষ্ণান আইয়ার নারিয়াল পানিওয়ালার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কার জিতেছিলেন। পরে তিনি ‘তাহাদের কথা’ (১৯৯২) এবং ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ (১৯৯৮) সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আরও দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন।
শুধু বাংলা কিংবা হিন্দি সিনেমা নয়, মিঠুন চক্রবর্তী ওড়িয়া, ভোজপুরি, তামিল, তেলুগু, কন্নড় এবং পাঞ্জাবিসহ ৩৫০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘পদ্মভূষণে’ ভূষিত হন।
মিঠুন অভিনীত নতুন সিনেমা ‘শাস্ত্রী’ দুর্গাপূজায় মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এছাড়া শিগগিরই ‘প্রতীক্ষা’ সিনেমায় অভিনয় শুরু করবেন তিনি।সূত্রঃবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম