যে কারখানায় অসন্তোষ, রোববার থেকে সেটি বন্ধ: বিজিএমইএ

তিন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে মত বিনিময়ে সিদ্ধান্ত জানাতে বিজিএমইএকে সভাপতিকে চাপ দেন হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদ। সভাপতি প্রথমে বলেছিলেন কোনো কারখানায় হামলা হলে সব কারখানা বন্ধ হবে। পরে সিদ্ধান্তে সংশোধন আসে।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকে শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে হামলা-ভাঙচুর অব্যাহত থাকলে এবার কারখানা বন্ধের হুঁশিয়ারি এসেছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএর পক্ষ থেকে।

সংগঠনটির সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, রোববার ঢাকার আশুলিয়ায় যে কারখানায় শ্রম অসন্তোষ দেখা দেবে, সেই কারখানাই শ্রম আইন অনুযায়ী বন্ধ ঘোষণা করা হবে।

দেশের আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের প্রধান খাত পোশাক শিল্পে দুই সপ্তাহ ধরে চলা অসন্তোষে সবচেয়ে বেশি উত্তাল আশুলিয়া এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার রাজধানীর উত্তরা কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এমন ঘোষণা দেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘রোববার কারখানা চালু রাখা হবে। তখন যদি কোনো কারখানায় হামলা, ভাঙচুর হয়… শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিলে আশুলিয়ার কারখানা মালিকেরা কারখানা বন্ধ করে দেবেন।’’

তার এমন ঘোষণায় সমর্থন দিয়ে পোশাক নিট পোশাক কারখানা মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘‘বিকেএমইএ সংগঠন এই ঘোষণাকে সমর্থন দিলাম। ভাঙচুর হলে আশুলিয়ার কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’

‘আশুলিয়াস্থ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে মতবিনিময় সভা’ শীর্ষক এই আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, আদিলুর রহমান খান ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অতিথি হয়ে বক্তব্য শোনেন।

দুপুরে শুরু হওয়া এই মত বিনিময় চলে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময়।

ছাত্র জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠী নানা দাবিতে মাঠে নেমেছে। পোশাক ও ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরাও ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে নানা দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।

পোশাক শ্রমিকদের দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। একেক কারখানায় একেক ধরনের দাবি উঠছে। সরকারের তরফে শুরুতে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়, যৌথ অভিযানও শুরু হয়।

কিন্তু কোনো কিছুতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। গত মঙ্গলবার গাজীপুরে বিগ বস নামে একটি বড় কারখানায় আগুন দেওয়া হয়।

সরকারের তরফে একাধিকবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসার আশ্বাস দেওয়া হলেও শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। শনিবারও আশুলিয়ায় ৩৬টি কারখানা বন্ধ থাকে, ১৩টিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এই পরিস্থিতিতে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বুধবার জানিয়েছেন, শ্রম উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে মত বিনিময় সভায় পোশাক শিল্প মালিকরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে থাকলেও কোনো ঘোষণা আসেনি।

এ কে আজাদের চাপ

সভা শেষে বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলামকে সমাপনী বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বান করেন সঞ্চালক। এসময় বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের উদ্যোক্তা এ কে আজাদ উঠে দাঁড়ান মঞ্চের চেয়ার থেকে।

তিনি মাইকের সামনে গিয়ে বলেন, “কোনো সিদ্ধান্ত তো হল না। আমরা একটি ঘোষণা চাই, কারখানা খোলা রাখব কি না।”

তিনি কারখানা মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপানারা কি কারখানা খোলা রাখবেন না কি বন্ধ করবেন? এই উপদেষ্টাদের তো আর পাওয়া যাবে না। তারা তো বারবার আসবেন না।’’

তিনি শ্রমিক নেত্রী মোরশেদা মিশুকে মঞ্চে ডাকেন বক্তব্য দেওয়ার জন্য।

 

এ কে আজাদ যখন মাইক নিয়ন্ত্রণ করছিলেন, তখন মঞ্চ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা উঠে দাঁড়ান। চেয়ার ছেড়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকেন নিজেদের মধ্যে।

বিজিএমইএর সভাপতি রফিকুল ইসলামকে বারবার কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণাটি জানিয়ে দেওয়ার জন্য বলতে থাকেন এ কে আজাদ।

এক পর্যায়ে বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘‘আগামীকাল থেকে কোনো কারখানায় সমস্যা হলে রোববার থেকেই সারা দেশের সব শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হল।’’

বিজিএমইএ সভাপতির ঘোষণা দিয়ে সরে গেলে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ও আদিলুর রহমানকে মাইকের সামনে আসতে পীড়াপীড়ি করলে তারা দুজনই চলে আসেন।সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *